“বাংলাদেশের লােকশিল্পের বিলুপ্তির কারণ এবং লােকশিল্প সংরক্ষনের উপায়”
উত্তরঃ
ক) লােকশিল্পের ধারনা ও বৈশিষ্ট্যঃ
লােকশিল্পঃ গােষ্ঠীবদ্ধ মানুষ যারা উন্নত সমাজের কাঠামাের মধ্যে | বিরাজমান করে কিন্তু ভৌগােলিক অথবা সাংস্কৃতিক কারণে শিল্পের
উন্নত ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তাদের নির্মিত এ শিল্পকে | লােকশিল্প রূপে বিবেচনা করা হয়। লােকশিল্পের ক্ষেত্রে গঠনশৈলীতে
বা স্টাইলে এবং গ্রামীণ লৌকিক পরিবেশের সরলতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা | শিল্পের এক প্রধান বৈশিষ্ট্য। লােকশিল্পে শিল্পীর সৃজনশীল মনের আবেগের অভিব্যক্তি যেমন থাকে, তেমনই থাকে সৃষ্টির আনন্দ। মনােরঞ্জন, লােকবিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, খেলনা এবং ব্যবহার্য বস্তু হিসাবেও তা ব্যবহৃত হয়।
লােকশিল্পের বৈশিষ্ট্যঃ
• এই শিল্প সাধারন লােকজন চর্চা করেন। • লােকশিল্প একটি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক জীবনের শিকড় এবং | জীবন ব্যবস্থা প্রতিফলিত হয়। • এই শিল্প দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার উপযােগী। • সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক মনােভাব এই শিল্পে ফুটে ওঠে। • লােকশিল্প দৃশ্যমান ও নান্দনিক। • লােকশিল্পে শিল্পীর সৃজনশীল মনের আবেগের অভিব্যক্তি থাকে।
খ) লােকশিল্পের বিভিন্ন উপকরণঃ
পুরাতন শাড়ীর কাপড় ও সুতাঃ পুরাতন কাপড় একত্রে সেলাই করে পাতলা কাঁথা তৈরি করে তার ওপর উপর রংবেরঙের সুতাে দিয়ে ডিজাইন করে যে বিশেষ সুন্দর কাঁথা তৈরি করা হয় তাকে নকশিকাঁথা বলে। এই নকশীকাঁথা তৈরীর মূল উপাদান সুতা ও পুরাতন শাড়ীর কাপড়। | কাঠঃ কাঠ লােকশিল্পের অতি সাধারণ একটি উপকরণ। এটির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের পুতুল, আসবাবপত্র, নান্দনিক ভাস্কর্য, ফুলদানী, কলমদানী ইত্যাদি তৈরি করা হয় । মাটিঃ মাটি হচ্ছে লােকশিল্পের সবচেয়ে সহজলভ্য উপাদান। এর সাহায্যে মাটির হাড়ি, পাতিল, সরা, সানকি, পুতুল ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ধরনের মাটির খেলনা তৈরি করা হয়। পাটঃ পাটের আঁশ দিয়ে দড়ি বানিয়ে তাতে বিনুনি পাকিয়ে হাড়ি ও বিভিন্ন পাত্র ঝুলিয়ে রাখার জন্য যে বিশেষ ধরনের ঝুলি বানানাে হয় তাকে শিকা বলে। একসময় গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে শিকা দেখা যেত। পাটের আঁশ এবং এতে লাগানাে রং, বিচিত্র নকশা ও কারিগরি সৌন্দর্যের নিদর্শন এই শিকা। পাট দিয়ে শুধু শিকা নয় আরও অনেক | জিনিস তৈরি করা হয়। বাঁশ ও বেতঃ। আমাদের দেশে বাঁশ ও বেত অপ্রতুল নয়। বাঁশের নানারকম ব্যবহার ছাড়া আমাদের চলতেই পারে না। ছােটখাটো সামান্য হাতিয়ারের সাহায্যে আমাদের কারিগররা বাঁশ ও বেত দিয়ে আজকাল আধুনিক রুচির নানা ব্যবহারিক সামগ্রী তৈরি করছে যা শুধু আমাদের নিজেদের দেশেই নয়, বিদেশেও বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বাঁশ ও বেত শিল্পের উৎকৃষ্ট সৃজনশীল নমুনাও দেখা যায় চেয়ার, চালুনি, ডালা, কুলা, খাড়ই, চাঁই ইত্যাদির মধ্যে।পাটঃহয়।
লােকশিল্প আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত কিন্তু বর্তমানকালে বিলুপ্তপ্রায়। এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে লােকশিল্পের এক নিবিড় সম্পর্ক আছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আজ গ্রামীণ লােকশিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নিম্নে লােকশিল্প বিলুপ্ত হবার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলােঃ • যথাযথ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের অভাবে আমাদের গ্রামীণ
লােকশিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। • লােকজন গ্রামের লােকশিল্পের সামগ্রীর চেয়ে শহরের
কলকারখানায় তৈরি জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। • আবার অনেক লােকশিল্প কারিগরের আগের মতাে দক্ষতা ও
শিল্পীমন নেই। • প্লাস্টিক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ।
এসব কারণে লােকশিল্প ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
ঘ) লোকশিল্প সংরক্ষণের উপায়:
আমাদের সকলকে লােকশিল্প সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে হবে। লােকশিল্প চর্চা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে | হবে যেমন:
CT দিতে
• লােকশিল্পের কারিগরদের যথাযথ সুযােগ সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা
করে দিতে হবে। • লােকশিল্প কে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। • জাদুঘরে কিংবা অন্যকোন প্রদর্শনীর স্থানে লােকশিল্প সংরক্ষণ
করতে হবে । • সুপরিকল্পীত উপায় এবং সুরুচিপূর্ণ লােকশিল্প প্রস্তুতের দিকে মনােযােগ দিতে হবে।
0 Comments