Ticker

6/recent/ticker-posts

আমি এখন শরণার্থী



news-image
নাসীমুল বারী
উঁইপোকার আক্রমণে আমি ও আমার পুরো পরিবার আজ বাসা থেকে বিতাড়িত। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে ‘আগামী দু’দিনও আমি বাসায় আসতে পারবো না। আজকের আক্রমণটা তো এতই ভয়াবহ যে বাসায় থাকলে হয়ত অক্কাই পেতে হতো। পালিয়ে ছোট ভাইয়ের বাসায় শরণার্থী হয়েছি। তাড়া পেয়ে আর শরণার্থী হবার ধকলে পরিশ্রান্ত আমি সন্ধ্যার পর এ পোস্ট দিয়েছি।
ছোট বেলায় ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম উঁইপোকার আজব কাহিনী। কী ভয়াবহ আর শক্তিশালী ওদের জীবনধারা। তারপর আরো পরে—
‘উঁই আর ইঁদুরের দেখ ব্যবহার
যা পায় তা কেটে করে ছারখার….”
এমন একটি কবিতার সারাংশ বহুবার লিখেছি বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায়।
সেই উঁইপোকার আক্রমণে আমার বহু বহু মূলবান সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। বেদনার আবেগে সে ফিরিস্তি দিতে গেলে চোখের সাগর যে অশান্ত হয়ে ওঠে। তবু একটু না বললেই নয়। আমার পত্রমিতালী জীবনের বাছাই করা হাজারখানেক চিঠি। এর মধ্যে উপমহাদেশের অন্যতম কিশোর পত্রিকা ‘সন্দেশ’ সম্পাদনা পরিবারের নীলা মজুমদারের আমাকে দেওয়া লেখালেখি বিষয়ক চিঠি।
চাঁদের হাটের ৫০তম সাহিত্য আসরের জন্য বাছাইকৃত লেখায় গল্পে মনোনীত হয়ে ছড়ার কিংবদন্তী ও সে সময়ে কিশোর বাংলা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল হক দাদুভাইয়ের আমন্ত্রপত্র। এমনি আরো অনেক। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশি দশকে বাংলাদেশ, ভারত থেকে প্রকাশিত প্রখ্যাত বিভিন্ন শিশুকিশোর মাসিক পত্রিকার শ’খানেক কপি। উপমহাদেশের একমাত্র শিশুকিশোর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘কিশোর বাংলা’র উদ্বোধনী সংখ্যাসহ আমার লেখা প্রকাশিত সংখ্যাগুলো। সে সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশিত সংখ্যাগুলো। আরো কিছু বহু প্রাচীন ও দুর্লভ বই-সামযিকী। ১৯৮১-৮৪ তে আমার সম্পাদিত ছোটদের সাহিত্য পত্রিকা ‘ছোটপাতা’। এর মধ্যে কিছুটা উঁইপোকায় খাওয়া ‘ছোটপাতা’র ক’টি সংখ্যা সংরক্ষণে রাখতে পেরেছি।
এ তো গেল আমার টিনশেড আর বাঁশের বেড়ার বাড়ির খবর। তারপর সে ভূমিতে অ্যাপার্টমেন্ট হলো। আমি পেলাম নয় তলায়। এত উপরে উঁইপোকা? না, নিশ্চিত হওয়া যায়।
ওমা একি! আবার আক্রমণ!
অল্পের জন্য অ্যাপার্টমেন্টর দলিলাদি রক্ষা করতে পারলাম। আমি কেরোসিন যুদ্ধ চালালাম। না ওরা আরো তেজে আক্রমণ চালালো। আমি বাধ্য হয়ে ‘পরাশক্তি’র সহায়তা চাইলাম। ‘সুযোগ বুঝে’ শর্ত সাপেক্ষ পরাশক্তি সহায়তা করতে চাইল। আমি ‘দুর্বল’ বলে বাধ্য হলাম পরাশক্তির শর্তে। আজ ওরা এলো। লড়াই চলছে। আর তাই আমি শরণার্থী।
হা হা হা পরাশক্তি চিনেছেন!
পরাশক্তি হলো উঁই দমনের এ সময়ের বিশেষ বিষ প্রয়োগ প্রযুক্তি ‘পেস্ট কন্ট্রোল’। সে বিষের ঝাঁজেই আমি ও আমার পরিবার…!
তবে পরাশক্তি বিজয়ী হবে কিনা, সে বিষয়ে খুত-খুত রয়ে গেছে।

Post a Comment

0 Comments