১০ম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা [৪র্থ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট ২০২২
১০ম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা [৪র্থ সপ্তাহ] অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২২
১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বঙ্গভঙ্গ” ‘
ক’ নং প্রশ্নের উত্তর ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের কারণঃ
স্বাধীনতা সংগ্রামের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলাে:
রাজনৈতিক কারণঃ পলাশীর যুদ্ধের পরে ইংরেজরা তাদের কূটকৌশলে রাজ্য বিস্তার নীতি এযােগ করে দেশীয় রাজাদের শঙ্কিত করে তােলে। তারা দিল্লির সম্রাটকে নিজেদের সম্রাট মনে করতেন। তৎকালীন সময়ে ডালহৌসি ঘােষণা করেন যে, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পরে দিল্লীর দরবার বিলুপ্ত হবে। এ ঘটনা জনসাধারণ বিশেষ করে মুসমাম মান আঘাত। হানে। তাই তারা ব্রিটিশদেরকে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
অর্থনৈতিক কারণঃ ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্রিটিশ হস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা শুরু করে ফলে আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কুটির শিল্প ইত্যাদি ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের দেশের প্রচুর পরিমাণ সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করা হয়। ফলে দেশবাসী দিন দিন ইংরেজদের উপর চড়াও হতে থাকে এবং ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের মাধ্যমে তাদের পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বহিগ্রকাশ ঘটায়।
সামাজিক কারণঃ তৎকালীন (১৮২৮ থেকে ১৮৩৫) ভারতীয় গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিযন বেটি ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন সমাজ সংস্কার করেন, যা হিন্দুদের অসন্তুষ্ট করে তােলে। বিশেষ করে সতীদাহ প্রথা নিবারণ ও বিধবা বিবাহ ভ্রচলনকে তখনও হিন্দুগণ মেনে নিতে পারেনি। তাই মুসলমান-হিন্দু শ্রেণীই ব্রিটিশ শাসনের অবসান কামনা করত।
ধর্মীয় কারণঃ পাদ্রীগণ এদেশের জনগণকে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা এদেশের যুব সম্প্রদায়কে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য নানা ধরণের লােভ-লালসা দেখাত। বক্তৃতা করে কিংবা পত্রিকায় লিখে হিন্দু-মুসলমানদের ধর্মবিদ্বেষী কথা বলত, ফলে স্বাভাবিক বাবেই হিন্দু-মুসলীমরা ব্রিটিশদের উপর ক্ষিপ্ত হতাে। ১৮৫৭ সালের ২৬ শে জানুয়ারি বঙ্গদেশের ব্যারাকপুরে সিপাহীরা প্রথম বিদ্রোহ শুরু করে। এরপর সিপাহীগণ দিল্লী অধিকার করে বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘােষণা করে। মীরাট, লক্ষ্ণৌ, কানপুর, বেরিলি, ঝাঁসি ইত্যাদি ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে থাকে।
খ নং প্রশ্নের উত্তর স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বঃ
ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ ওঠে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। বাংলা তথা সমগ্র ভারতের ইতিহাসে সিপাহি বিদ্রোহের গুরুত্ব অনেক। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল প্রথম ব্রিটিশবিরােধী স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা। বাংলায় শুরু হয়ে ইংরেজ অধিকৃত ভারতের অন্যান্য এলাকার সিপাহিদের মধ্যেও এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে সিপাহি ‘মঙ্গল পাণ্ডের’ নেতৃত্বে প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয়। ইংরেজরা এই বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করে। নিরপরাধ বহুনিক এ সময় নির্বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে সে সময় বাংলার বিদ্রোহী সিপাহিদের ফাঁসি দেওয়া হয়। শুরু হয় ব্রিটিশরাজ তথা রানী ভিক্টোরিয়ার শাসন। পরবর্তী ইংরেজবিরােধী অনেক আন্দোলই সিপাহি বিদ্রোহের চেনা কাজ করেছে। ১৮১৯ সালে ১লা নভেম্বর। মহারানি ভিক্টোরিয়ার এক ঘােষণাপত্রে স্বত্ববিলােপ নীতি এবং এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য নিয়ম বাতিল করা হয়। তাছাড়া এই ঘােষণাপত্রে যােগ্যতা অনুযায়ী ভারতীয়দের চাকরি প্রদান এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তাসহ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ক্ষমা ঘােষণা করা হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিযে ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটায়।
‘গ’ নং প্রশ্নের উত্তর বঙ্গভঙ্গের কারণঃ
বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যে আন্দোলন হযেছিল তাই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে তৎকালীন বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়।
বঙ্গভঙ্গের কারণঃ বঙ্গভঙ্গের পেছনে যে সুদূর সারি কারণ আছে তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১। প্রশাসনিক কারণঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ মনে করেন বসভসের প্রধান কারণ হল প্রশাসনিক কারণ। বাংলা ছিল বিশাল গিদেশ যার আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল। ফলে শাসনভার ছিল কষ্টসাধ্য। লর্ড কার্জন প্রথম থেকেই একে প্রশাসনিক সংস্কার নামে অভিহিত করেন।
২। রাজনৈতিক কারণ:
১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ নামক একটি রাজনৈতিক দল জন্ম হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকার ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি অবলম্বন করে।
৩। অর্থনৈতিক কারণঃ ১৯০৫ সালের বদভসের পূর্বে শিল, ব্যবসা-বাণিজ্যি, অফিস-আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রায় সব কিছুই কলকাতার কেন্দ্রিভূত | ছিল। ফলে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা সর্বত্রই পিছিয়ে পড়েছিল। এ জন্য পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগণ বসভদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন | জানায়।
৪। সামাজিক কারণ: ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমান সম্প্রদায় নির্মমভাবে শােষিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। মুসলমানরা সামাজিক প্রভাব-ভ্রতিপত্তিহীন একটি দরিদ্র, রিক্ত ও নিঃস্ব সম্প্রদাযে | পরিণত হয়। সুতরাং লর্ড কার্জন কর্তৃক বঙ্গবসের চিন্তা-ভাবনা| শুরু হলে পূর্ববাংলার মুসলমান সম্প্রদায় স্বভাবতই এর প্রতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তাই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি হয়।
৪) সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানঃ ১৯০৫ সালে বসভসের ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ করে বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ভারতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা| বৃদ্ধি পায়।
৫) ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ: বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে কলকাতা কেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করে সুযােগ লাভ করে। বঙ্গভসের ফলে সকল পেশাগত শ্রেনী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বসবসের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গের মুসলমানগণ তাদের হারানাে প্রভাব-প্রতিপত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে থাকে।
৫। ধর্মীয় কারণঃ অবিভক্ত বাংলার পূর্ব অংশে মুসলমানগণ ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পশ্চিম অংশে হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে এ দৃষ্টিকোণ থেকেও দুই সম্প্রদায়ের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়।
‘ঘ’ নং প্রশ্নের উত্তর বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়াঃ
বসভসের ফলাফল ছিল সদূরত্ব বসভসের ফলাফল সাময়িক হলেও বিশেষ করে পূর্বব সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় বেশী লাভবান হয়েছিল।
১) মুসলমান সমাজের প্রতিক্রিয়াঃ বঙ্গভঙ্গের ফলে নতুন প্ৰদেশ তথা পূর্ববস ও আসানের রাজধানী হয় ঢাকা। রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বসভসকে । মুসলমানগণ তাদের গৌরব ও মর্যাদা ফিল মানার আনন্দে মেতে ওঠে। অর্থাৎ বসভসের ফলে পূর্ব বাংলার *. মানুষের। ভাগ্যোন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হয়।
2) হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াঃ বসভসের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অবস্থান ছিল খুবই কঠিন। বাংলার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দুরাই এর বিরুদ্ধে প্রচন্ড ঝড় তুলেছিল। তারা একে মাতৃভূমির অসচ্ছেদ হিসাবে বর্ণনা করে।
৩) ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশঃ হিন্দুদের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন মােকাবেলা করার জন্য মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও নেতৃবৃন্দ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তাই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি হয়।
৪) সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানঃ ১৯০৫ সালে বসভসের ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ করে বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ভারতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা| বৃদ্ধি পায়।
৫) ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ: বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে কলকাতা কেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করে সুযােগ লাভ করে। বঙ্গভসের ফলে সকল পেশাগত শ্রেনী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
0 Comments