দেখুন পরাবাস্তব পেইন্টিং কিংবা সাইন্স-ফিকশন দৃশ্যের মত দেখতে ৩৩টি জায়গার ছবি। এগুলি দেখতে অন্যভুবনের মত অদ্ভুতদর্শন মনে হলেও এই পৃথিবীরই আমাদের না জানা বা অল্প জানা কিছু স্থানের ছবি।
১) সালার দে ইয়ুনি, বলিভিয়া
বর্ষাকালে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লবণ-ভূমি হয়ে যায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আয়না। প্রাচীনকালে অনেকগুলি লেকের একসাথে মিলনের ফলে সালার দে ইয়ুনির জন্ম হয়। লবণ-সমতল বা সল্ট-ফ্ল্যাট প্রতিবিম্বের সল্ট-ফ্ল্যাট খুব স্বচ্ছ আয়না হিসেবে কাজ করে। স্যাটেলাইটের শক্তি বা ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
২) তিয়ানজি পর্বতমালা, চীন
একইসাথে খুব লম্বা এবং চিকন ধরনের এই পর্বতগুলি দেখে মনেই হয় না এইগুলি পৃথিবীতেই আছে। মনে হয় পৃথিবীর বাইরের কোথাও। এই পর্বতগুলি এ কারণে জেমস ক্যামেরনের আভাটার ছবিতেও ব্যবহার করা হয়েছে। ৩৮০ মিলিয়ন বছর আগে এইগুলি সমুদ্রের তলদেশে গড়ে উঠেছিল, পানি প্রবাহের কারণে এর আশেপাশের বালির তৈরি পাথরগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু শক্ত শিলাগুলিই টিকে আছে। কোনো পর্বতের দৈর্ঘ্য সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ ফুট উঁচু।
৩) সেন্টিনেলস অব দ্য আর্কটিক, ফিনল্যান্ড
এই গুলিই সেন্টিনেলস বা বরফে ঢাকা বড় আকারের গাছ। এই অদ্ভূত দৃশ্যটি শুধু শীতকালেই চোখে পড়ে যখন তাপমাত্রা -৪০ থেকে -১৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মধ্যে অবস্থান করে।
৪) রীড ফ্লুট কেইভস, চীন
এই ২৪০ মিটার গুহা দৃশ্যটি গত ১২০০ বছর ধরে চীনের গুইলিনের সবছেয়ে জনপ্রিয় একটি আকর্ষণের জায়গা। এর সুন্দর স্টালাকটাইট, স্টালাগমাইট, পিলার পানির ক্ষয়ের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে এইগুলি বিভিন্ন রঙের আলো দিয়ে হাইলাইট করা। এর ফলে এটা সুন্দর একটি সুররিয়াল পরিবেশ তৈরি করে।
৫) স্কাফটাফেল আইস কেইভ, আইসল্যান্ড
যখন পানির প্রবাহ কোনো হিমবাহের ভিতরে গর্ত তৈরি করে তখন হিমবাহের প্রান্তে অস্থায়ীভাবে বরফের গুহা বা আইস কেইভ তৈরি হয়। এই আইস কেইভের ভিতরটা খুব আবদ্ধ। এর ভিতরে অল্প পরিমাণ বাতাস আছে। এবং এই গুহার দেয়াল নীল ছাড়া আর সব আলো শুষে নেয়। ফলে এখানের বরফ একটি আকর্ষণীয় রঙে দেখা যায়।
৬) আন্টেলোপ ক্যানিয়ন, আরিজোনা, আমেরিকা
কয়েক মিলিয়ন বছর আগে পানির প্রবাহের কারণে এই গভীর গিরিখাতটি সৃষ্টি হয়। আর এর গভীরে আলো কম পৌঁছানর কারণে এটাকে আরো গভীর মনে হয়। আর এর দেয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রঙে দেখা যায়।
৭) বাইগার ওয়াটারফল, রোমানিয়া
স্থানীয়রা এই জলপ্রপাতটিকে বলে থাকে, ‘মিনিস ঘাট থেকে আসা অলৌকিক জলপ্রপাত’। এই প্রপাতটি যে শৈবাল -চূড়া পরিভ্রমণ করে আসে সেটা আট মিটার লম্বা। এটা পৃথিবীর অল্প কয়টি সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাতগুলির একটি।
৮) সী অফ স্টারস, ভাধু আইল্যান্ড, মালদ্বীপ
দিনের আলোতে স্বাভাবিক দেখালেও, রাতে এই সমুদ্র সৈকত জীবন্ত হয়ে ওঠে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামের একধরনের সামুদ্রিক অণুজীবের কারণে এই সৈকত জ্বলতে থাকে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের নিঃশ্বাস গ্রহণের কারণেই এরকম ঘটে আর পুরো সৈকতকে তখন দেখতে মহাকাশের মত মনে হয়।
৯) গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক হট স্প্রিং, উইয়োমিং, আমেরিকা
গ্র্যান্ড প্রিসম্যাটিক হট স্প্রিং আমেরিকায় সবচেয়ে বড় গরম পানির জলাশয়। এই জলাশয়ের পানির এরকম গাঢ় রঙের কারণ হলো, জলাশয়ের পানিতে রঞ্জক ধরনের অণুজীব। এই অণুজীবগুলি যেসব পানিতে প্রচুর খনিজ উপাদান আছে, তাদের আশেপাশে জন্মায়।
১০) ডেডভ্লেই, নামিবিয়া
এই ছবিগুলি অবশ্যই কোনো সুররিয়ালিস্ট পেইন্টিং না। এগুলি ডেডভ্যালির ফটোগ্রাফ। এই ডেডভ্যালিতে যে গাছগুলি দেখা যাচ্ছে সেগুলি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বালিয়াড়ির বিপরীতে দাঁড়ানো। একসময় এখানে গভীর বন ছিল, আর এখন মরুভূমি।
১১) টারকুয়োজ আইস, লেক বাইকাল, রাশিয়া
লেক বাইকাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুরাতন ফ্রেশ পানির হ্রদ। শীতকালে এই হ্রদ জমে যায়। কিন্তু এই হ্রদের পানি এত পরিষ্কার যে বরফের ১৩০ ফুট নিচে পর্যন্ত আপনি পরিষ্কার দেখতে পাবেন। মার্চ মাসে বরফে তুষার এবং রোদের কারণে ফাটল ধরে। এর ফলে বরফ থেকে ফিরোজা রঙের আলো ঠিকরে বের হয় যেটা বাহির থেকে দেখা যায়।
১২) সকোটরা, ইয়েমেন
সকোটরা দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ উদ্ভিদ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় নি। সবচেয়ে উদ্ভট প্রজাতির একটি হচ্ছে ড্রাগন ব্লাড গাছ। এই গাছটি দেখতে ছাতার মত।
১৩) ঝ্যাংগাই ড্যানজিয়া ল্যান্ডফরম, গানসু, চীন
এই রঙিন পাথরগুলি ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে পড়ে থাকা খনিজ পদার্থ এবং বালি-পাথরের ফলে তৈরি হয়েছে। বাতাস এবং বৃষ্টি এই পাথরগুলিকে সুন্দর আকৃতি দিয়েছে। যেমন, প্রাকৃতিক স্তম্ভ, টাওয়ার, গিরিখাত, উপত্যকা, জলপ্রপাত ইত্যাদি।
১৪) টানেল অব লাভ, ক্লীভান, ইউক্রেন
অনেক বছর ধরে প্রতিদিন তিনবার করে ট্রেন যাতায়াতের ফলে আশেপাশের গাছগুলিসহ এই টানেলটি এরকম হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় এখন টানেলটি একটি দারুণ রোমান্টিক জায়গায় পরিণত হয়েছে।
১৫) গ্লোওর্ম কেইভস, ওয়াইটোমো, নিউজিল্যান্ড
অসংখ্য ছোট ছোট জোনাকি এই গুহার ছাদ থেকে ঝুলে থাকে এবং হাল্কা আলো বিকিরণ করে। ফলে, এই গুহা দেখলে মনে হয় সায়েন্স-ফিকশন সিনেমার কোনো দৃশ্য।
১৬) ইউয়ানইয়াং কাউন্টি, চীন
ইউয়ানইয়াং কাউন্টিতে চাষাবাদের পদ্ধতির কারণে এমন একটি ল্যান্ডস্কেপ তৈরি হয়েছে, আকাশ থেকে দেখলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। এই ধানক্ষেতগুলি আইলাও পর্বতের ঢালে অবস্থিত। এইখানকার সামনের খোলা জায়গাগুলির কারণে অসমতল ল্যান্ডস্কেপেও একটি ফ্ল্যাট বা সমতল দৃশ্য তৈরি হয়েছে।
১৭) লেক হিলিয়ার, অস্ট্রেলিয়া
এই লেকের গোলাপি রঙ তৈরি হয়েছে পানিতে শ্যাওলা এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে। অদ্ভুত রঙ ছাড়া এই লেকের স্থানীয় লোকজন বা উদ্ভিদ-প্রানীর উপর ক্ষতিকর কোনো প্রভাব নেই।
১৮) পামুক্কেল হট স্প্রিংস, তুরস্ক
কয়েক মিলিয়ন বছরে পামুক্কেল গরম পানির জলাশয় সুন্দর একটি ল্যান্ডস্কেপে পরিণত হয়েছে। দেখে মনে হতে পারে জলাশয়ের আশেপাশের জায়গাগুলি বরফের, কিন্তু তুরস্কে সারা বছরই গরম থাকে। আশেপাশের জায়গা চুনাপাথর দিয়ে ঢেকে দেওয়া।
১৯) ক্যানো ক্রিস্টাল রিভার, কলম্বিয়া
এখানে অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাস হওয়ায় এই নদীটিতে হলুদ, সবুজ, নীল, কালো এবং লাল সব ধরনের রঙই নদী ধরে আগাতে থাকলে দেখা যায়। এখানের পাথরগুলি ১.২ বিলিয়ন বছরের পুরানো। যারা এই নদী দেখেছেন তারা এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদী বলে থাকেন।
২০) পাতাগোনিয়া মার্বেল কেইভস, চিলি
হাজার হাজার ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের দেয়ালে ঢেউয়ের ধাক্কা লাগার কারণে এই গুহার দেয়ালগুলি মসৃণ এবং প্যাঁচানো ধরনের হয়েছে। আর হ্রদের নীল পানিতে গুহার দেয়ালের প্রতিবিম্বের কারণে দৃশ্যটি আরো বেশি আকর্ষণীয়।
২১) জায়ান্ট কজওয়ে, নর্দান আয়ারল্যান্ড
৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন বছর আগে অগ্নুৎপাতের ফলে এখানে একটি লাভার মালভূমি তৈরি হয়। লাভা ঠাণ্ডা অবস্থায় ভাগ ভাগ হয়ে স্তম্ভে পরিণত হয়। আর এই স্তম্ভগুলি দেখতে এত নিখুঁত যে মনে হয় এগুলি মানুষের তৈরি করা।
২২) ফ্লাই গ্লেইসার, নেভাডা
এই প্রস্রবনের ধারাটি দুর্ঘটনাবশত তৈরি হয়েছিল। একটি কূপ খনন করে পরে সেটি বন্ধ না করার কারণে এটি হয়। খনিজ পদার্থ এবং শ্যাওলা বের হয়ে জমতে জমতে এরকম অদ্ভুত দেখতে একটি টিলা হয়ে যায়।
২৩) আন্ডারওয়াটার ওয়াটারফল, মরিশাস আইল্যান্ড
মরিশাসে সমুদ্রের শক্তিশালী ঢেউয়ের কারণে সবসময় সৈকত থেকে বালি সমুদ্রের নিচের দিকে সরে যায়। এর ফলে পানির নিচে এই ধরনের জলপ্রপাত তৈরি হয়।
২৪) মাউন্ট রোরামিয়া- সাউথ আমেরিকা
টেবিলের মত দেখতে এই পর্বতটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন পর্বতের একটি। দুই বিলিয়ন বছর আগে ভূ-অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কারণে এই পর্বতটি তৈরি হয়েছিল। এই পর্বতের সাইডগুলি সম্পূর্ণ খাড়া। এটাতে অনেকগুলি জলপ্রপাত আছে। এতে আরোহণ করা অসম্ভবের কাছাকাছি একটা ব্যাপার।
২৫) আওগাশিমা, জাপান
আওগাশিমা একটি আগ্নেয় দ্বীপ। এটা টোকিও উপকূল থেকে ২০০ মেইল দূরে অবস্থিত। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো এর ভূগোল এর দৃশ্যের চেয়ে সুন্দর। এই দ্বীপে একটি ছোট অগ্নিগিরি আছে।
২৬) ফিঙ্গাল’স কেইভ, স্কটল্যান্ড
নর্দান আয়ারল্যান্ডের জায়ান্ট কজওয়ের মত এই গুহাটিও কয়েক মিলিয়ন বছরের লাভা ঠাণ্ডা হওয়ার পর ভাগ হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরের অংশে যে খাঁজ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি।
২৭) আন্ডারওয়াটার রিভার, সিনোট অ্যাঞ্জেলিটা, মেক্সিকো
সিনোট অ্যাঞ্জেলিটায় পানির নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীটি হাইড্রোজেন সালফেট দিয়ে পরিপূর্ণ। ফলে এই নদীর পানি সাধারণ লবণ পানির চেয়ে ভারী বা ঘনত্ব বেশি। যখন এই হাইড্রোজেন সালফেট মিশ্রিত পানি সাধারণ পানিতে ডুবে যায় তখন এটি নিজেই আলাদাভাবে পানির নিচে প্রবাহিত হয়।
২৮) নাইকা মাইন, মেক্সিকো
এই রুপার খনিটি ক্রিস্টাল দ্বারা আবৃত। এটা ৫০ ফুট লম্বা এবং ৪ ফুট প্রশস্ত। এর নিচের ম্যাগমা স্তর থেকে যে হাইড্রোথার্মাল তরল নির্গত হয়েছে তার ফলে এই ক্রিস্টাল আবরণ তৈরি হয়েছে। যারা গুহা দেখতে ভালোবাসেন তাদের জন্য অবশ্যই দেখার জায়গা এটা।
২৯) হিডেন বীচ, মেক্সিকো
১৯০০ সালের দিকে একটি সামরিক বিস্ফোরণের পরীক্ষা কালে এই অসাধারণ জায়গাটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি দ্বীপ দ্বারা পরিবেষ্টিত। দ্বীপটি একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। এই লুকানো সৈকতটিতে যাওয়ার একমাত্র উপায় একটি পঞ্চাশ ফুট টানেলের ভিতর দিয়ে সাঁতার কেটে যাওয়া।
৩০) লেক নাটরন, তাঞ্জানিয়া
এই লেকের পানিতে লবণের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি। লবণে আসক্তি আছে এমন অণুজীবগুলি এখানে বেড়ে ওঠে এবং লাল রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে। ফলে পানির রঙ লাল হয়ে থাকে। অন্যান্য প্রাণিদের জন্য এই পানি বিপদজনক। এই পানিতে নামার পর অনেক প্রাণি চুনাপাথরে পরিণত হয়।
৩১) দি আই অব আফ্রিকা, মৌরিতানিয়া
এটা সাহারা মরুভূমির মাঝখানে পাওয়া গেছে। এটা ২৪ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। এর প্রাকৃতিক গঠন এত সুন্দর যে অনেকদিন ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন এটা মহাজাগতিক কোনো ঘটনার ফলে তৈরি হয়েছে।
৩২) হাইল্যান্ডস, আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের বিচ্ছিন্ন হাইল্যান্ডের উত্তর গোলার্ধে অভাবিত কিছু দৃশ্য আছে। দেখতে অসাধারণ হিমবাহ, গর্ত, হ্রদ এবং প্রস্রবণের ধারার দৃশ্য দিনের বেলায়ই স্তব্ধ করে দেয়। কিন্তু যখন রাত নামতে শুরু করে, এটা পৃথিবীর সুন্দরতম জায়গায় পরিণত হয়। বিশেষ করে সূর্যোদয় দেখার জন্য।
৩৩) প্লিটভাইস লেক, ক্রোয়েশিয়া
প্লিটভাইস প্রাকৃতিক উদ্যানটি ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে সবচেয়ে পুরাতন প্রাকৃতিক উদ্যান। কয়েক হাজার বছর ধরে চুনাপাথর এবং চকের উপর পানির প্রবাহের ফলে প্রাকৃতিকভাবে বাধ, সুন্দর সুন্দর হ্রদ, গুহা এবং জলপ্রপাত তৈরি হয়েছে এখানে।
0 Comments